“নজরুল চর্চার নানা দিক” শীর্ষক সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

05 February 2023

“নজরুল চর্চার নানা দিক” শীর্ষক সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

বাঁশরী-একটি নজরুল চর্চা কেন্দ্র ২২শে মাঘ রবিবার ১৪২৯/০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বিকাল ০৫.০০ ঘটিকায় ঢাকার কবি নজরুল ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে বাংলাদেশ বন্ধু ফাউন্ডেশনের (বন্ধু) সহযোগিতায় “নজরুল চর্চার নানা দিক” শীর্ষক একটি সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশ ও বিদেশের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ। এঁদের মধ্যে জনাব কাজী বেলাল, চিফ কো অর্ডিনেটর, নজরুল এন্ডাউমেন্ট, কানেক্টিকাট বিশ্ববিদ্যালয় (ইউএসএ); জনাব গুলশান আরা, বিজ্ঞানী ও নজরুল গবেষক (ইউএসএ); জনাব প্রফেসর ড. লীনা তাপসী খান, বিশিষ্ট নজরুল সংগীতশিল্পী ও গবেষক; জনাব মোস্তফা আনোয়ার স্বপন, বিজ্ঞানী ও সংগীতকার; জনাব সালাউদ্দিন আহম্মেদ, বিশিষ্ট নজরুল সংগীতশিল্পী ও প্রশিক্ষক; জনাব এ কে আজাদ, কবি, গীতিকার ও গবেষক; জনাব ফাতেমা-তুজ-জোহরা, বিশিষ্ট নজরুল সংগীতশিল্পী। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জনাব মোঃ জাকীর হোসেন, অতিরিক্ত সচিব ও নির্বাহী পরিচালক, কবি নজরুল ইন্সটিটিউট।

বিকেল ০৫.০০টায় সমবেত কণ্ঠে “জয় হোক, জয় হোক” দলীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটির সূচনা ঘটে। এরপর বিকেল স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাঁশরীর সভাপতি ড. ইঞ্জিনিয়ার খালেকুজ্জামান।  শুরু হয় আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দের বক্তব্য। বক্তাগণ তাদের বক্তব্যে কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্যকর্মে বহুমাত্রিক দিক ও বৈশিষ্ট্যসমূহ তুলে ধরেন।

ড. ইঞ্জিনিয়ার খালেকুজ্জমানের পর বক্তব্য প্রদান করেন কবি নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মোঃ জাকীর হোসেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন নজরুলের জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকীতে তাঁর সমাধিতে ফুল দিতে গিয়ে কেউ স্থিরচিত্তে শ্রদ্ধা নিবেদনে মনযোগী নয়, বরং তাদের দৃষ্টি থাকে ক্যামেরার দিকে। এরপর বক্তব্য দেন বিশিষ্ট নজরুল সংগীতশিল্পী ড. সালাহউদ্দিন আহম্মেদ। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, বাঁশরী সংগীত নিয়ে যে কাজ করছে তার ছিটেফোঁটাও যদি কেউ করতো তাহলে নজরুল সংগীত আরো এগিয়ে যেত। এরপর তিনি নজরুল রচিত “এসো বধু ফিরে এসো” গানটি পরিবেশন করেন। এরপর বক্তৃতা দেন আরেকজন বিশিষ্ট অতিথি কাজী বেলাল। তিনি ১৯৮৫ সালে নজরুল চর্চা শুরু করেছিলেন বলে জানান। নজরুল চর্চার শিকড় আরও গভীরে প্রোথিত (Deeep-rooted) করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। নজরুল এনডাউমেন্ট প্রতিষ্ঠার পটভূমি ব্যাখ্যা করেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নজরুল চর্চা প্রসারের গল্প বলেন তিনি। পরবর্তীতে অন্যতম অতিথি ও বিশিষ্ট নজরুল সংগীতশিল্পী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের অধ্যাপক ড. লীনা তাপসী খান তার বক্তব্যে বলেন, “গান একটি সাধনার বিষয়। একজনকে ছোট করে করে বড় হওয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি আরো বলেন, “আমরা যে কোনো গানের জন্য ভারতের বইয়ের ওপর নির্ভরশীল। এটা থেকে উত্তরণ জরুরী। এটা থেকে বের হয়ে আমাদের নিজেদের বই বের করার চেষ্টা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের পাঠ্যসূচীতে নজরুলের সৃষ্টিকর্ম এমনভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যাতে পূর্ণাঙ্গ নজরুল সম্পর্কে ধারণা দেওয়া যায়। কবি নজরুলকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম মূল্যায়ন করেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। নজরুল চর্চার দুর্দশার পেছনে শিল্পীদেরও অনেকাংশে দায় আছে বলে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন। তিনি Spiritual Nazrul নামে একটি ডকুমেন্টারি নির্মাণ করেছেন বলে উল্লেখ করেন। এরপর আরেকজন আমন্ত্রিত অতিথি কবি এ কে আজাদ বক্তব্য রাখেন। তিনি তার বক্তব্যে নজরুলের বিভিন্ন লেখায় বিজ্ঞান বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি নজরুলকে নিয়ে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের উক্তি” যারা নজরুল চর্চা করবে, তারা অতিমানবে পরিণত হবে।” উল্লেখ করেন। নজরুল শুধু কবি নন, তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দার্শনিকদের অন্যতম বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এরপর বাঁশরীর নৃত্যশিল্পী পৃথুলা দত্ত প্রজ্ঞা নজরুলের গানে মনোজ্ঞ নৃত্য পরিবেশন করেন। নৃত্য পরিবেশনার পর বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী ফাতেমা-তুজ-জোহরা মঞ্চে প্রবেশ করেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, এখন নতুন প্রজন্ম গান শেখার ক্ষেত্রে ইউটিউব-নির্ভর হয়ে যাচ্ছে, ফলে সঠিক ও শুদ্ধ সুরে গান শিখতে ব্যর্থ হচ্ছে। দর্শক ও আমন্ত্রিত অতিথিদের অনুরোধে তিনি একে একে নজরুলের জনপ্রিয় ‘খেজুর রস’, ‘নাচের নেশার ঘোর লেগেছে’, ‘মহাকালের পানে এসে গৌরি হল’ গান  পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানের সর্বশেষ বক্তা জনাব মোস্তফা আনোয়ার স্বপন তার বক্তব্যে নজরুলের গান বিভিন্ন ভাষায় তিনি অনুবাদ করছেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি নজরুলের গান পর্তুগিজ, জার্মান ভাষায় অনুবাদ করছেন বলে উপস্থিত সুধীজনদের জানান। সেই সাথে তিনি নজরুলের গান অন্য ভাষায় অনুবাদের চ্যালেঞ্জগুলো বর্ণনা করেন। তিনি আক্ষেপ করে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে নজরুলের গান শোনার অনীহার কথা বলেন। এরপর তিনি পর্তুগিজ ও জার্মান ভাষায় তার নিজের অনুবাদকৃত নজরুলের গান গেয়ে শোনান।  

এরপর নজরুলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিধর্মী গান “মোরা এক বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু মুসলমান" বাঁশরীর শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে পরিবেশনার মধ্য দিয়ে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনায় ছিলেন বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী টিটো মুন্সী।