
21 September 2025
মহালয়ায় মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দিরে বাঁশরীর দুর্গাসংগীতের আসর-২০২৫
শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে বাঁশরী প্রতিবছর ঢাকা মহানগরী ও দেশের অন্যান্য প্রান্তের বিভিন্ন মন্দিরে কাজী নজরুল ইসলাম বিরচিত দুর্গাসংগীতের আসর আয়োজন করে থাকে। প্রতিবারের ন্যায় এবারও বাঁশরী-একটি নজরুল চর্চা কেন্দ্র শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে কাজী নজরুল ইসলাম রচিত দুর্গাসংগীতের অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে।
এই ধারাবাহিকতায় ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ রবিবার সন্ধ্যা ৭টায় মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দিরে বিগত সময়ের ন্যায় এবারও মহালয়ায় “সম্প্রীতির কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিরচিত শ্রী শ্রী দুর্গাসংগীতের আসর” শীর্ষক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে বাঁশরী দুর্গাসংগীতের আসর কার্যক্রম শুরু করেছে। এ আয়োজনের সার্বিক সহযোগিতায় ছিল মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির।
বাঁশরীর শিল্পী সুদাম কুমার বিশ্বাস চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে দুর্গাসংগীতের আসর শুরু করেন। এরপর কাজী নজরুল ইসলাম রচিত আগমনী সংগীত দিয়ে দুর্গাসংগীতের আসর শুরু হয়। বাঁশরীর শিল্পীগণ দলীয় কণ্ঠে একে একে-
১। প্রণমামী শ্রী দুর্গে, ২। ওরে আলয়ে আজ মহালয়া, ৩। ওরে আয় অশুচী, ৪। আনন্দ রে আনন্দ, ৫। মা এসেছে মা এসেছে, ৬। জয় মহাকালী, ৭। মায়ের আমার রূপ ৮। মাগো কে তুই, ৯। এলো রে এলো ঐ, ১০। খড়ের প্রতিমা পূজিসরে তোরা, পরিবেশন করেন।
এরপর শিল্পীগণ গ্রুপভিত্তিক নজরুল রচিত দুর্গাসংগীত পরিবেশন করেন। গ্রুপ ১ পরিবেশন করে কীর্তন অঙ্গের "বাজে মঞ্জুল মঞ্জির.....", গ্রুপ ২ পরিবেশন করে "ঘর ছাড়া কে বাঁধতে এলি", গ্রুপ ৩ এর শিল্পীগণ পরিবেশন করে শ্যামাসংগীত "মহাকালের কোলে এসে" এবং গ্রুপ ৪ শিল্পীগণ "নিপীড়িতা পৃথিবী ডাকে” পরিবেশনের মাধ্যমে মহালয়ার পূজায় আগত ভক্ত-দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করেন।
এরপর বাঁশরীর শিল্পী সুমন দাস “এসো মা দশভূজা”, শিল্পী হৃদয় হোসেন “আয় মা ডাকাত কালী”, শিল্পী সিদ্ধার্থ গোলদার “মা গো চিন্ময়ী রূপ ধরে আয়”, এবং শিল্পী মিলন পোদ্দার “জগৎ জুড়ে জাল ফেলেছিস মা” গানের মূর্ছনায় মহালয়ার এ আয়োজনে বাড়তি মাত্রা যোগ করেন। মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দিরে মহালয়ার এ দুর্গা সঙ্গীতানুষ্ঠানের নেতৃত্ব দেন বাঁশরীর জ্যেষ্ঠ শিল্পী সুদাম কুমার বিশ্বাস।
এ আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণীয় পরিবেশনা ছিল বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী টিটো মুন্সীর কণ্ঠে আবৃত্তি। তিনি সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত “আগমনী কবিতা” আবৃত্তির মাধ্যমে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের মাঝে মুগ্ধতা ছড়ান।
বাঁশরীর সভাপতি ড. ইঞ্জিনিয়ার খালেকুজ্জামান বাঁশরীর পক্ষ থেকে মহালয়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভক্ত, দর্শক, শ্রোতা এবং মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির পরিচালনা কমিটিকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, “আমরা বিগত কয়েক বছর ধরে মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দিরে মহালয়ার অনুষ্ঠান করে আসছি।” বাঁশরীকে এই সুযোগটা করে দেওয়ার জন্য তিনি আবারো মন্দির পরিচালনা পর্ষদকে ধন্যবাদ জানান। নজরুল রচিত দুর্গাসংগীতগুলো দর্শক-শ্রোতাদের ভালো লেগেছে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমরা সাম্যের বাংলাদেশ চাই।” কাজী নজরুল ইসলাম সাম্য ও সম্প্রীতির জন্য তাঁর লেখনী ধারণ করেছিলেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন। “ভবিষ্যতেও আমরা সকলে মিলে আবার এখানে অনুষ্ঠান করতে পারবো” বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। “আমরা একটা সুন্দর বাংলাদেশ চাই, সবাই মিলে একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চাই”, এমন আশাবাদও ব্যক্ত করেন তিনি। তাঁর কথায়, “আমরা যদি সকলে মিলে যদি চেষ্টা করি, আশা করি সেই উদ্দেশ্য সাধনে আমরা সফল হবো।” তিনি টিটো মুন্সীর কণ্ঠে আবৃত্তি করা “আগমনী” কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, অসুর শক্তি কোনদিন জয়ী হবে না, তার পরাজয় অনিবার্য এবং সম্প্রীতির জয় নিশ্চিত।