জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানের শতবর্ষপূর্তি ও সুর বিকৃতির প্রতিবাদে  আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত

17 November 2023

জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানের শতবর্ষপূর্তি ও সুর বিকৃতির প্রতিবাদে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত

গত ১৭ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে ঢাকা প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাঁশরীর উদ্যোগে শুক্রবার সকাল ৯টায় ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানের শতবর্ষ পূর্তি ও সুর বিকৃতির প্রতিবাদে একটি আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।

সম্প্রতি ভারতের পিপা সিনেমায় কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানের সুর বিকৃত করে গাওয়া হয়। এতে সুরারোপ করেন প্রখ্যাত সুরকার এ আর রহমান যা মূল গানের সুর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।

এ আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিভিন্ন প্রথিতযশা ব্যক্তিগণ। এদের মধ্যে প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী ফাতেমা-তুজ-জোহরা, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের অধ্যাপক ড. লীনা তাপসী খান এবং বাঁশরীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. ইঞ্জিনিয়ার খালেকুজ্জামান, সংগীতশিল্পী রুমী আজনবী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

সভার শুরুতে ড. ইঞ্জিনিয়ার খালেকুজ্জামান স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং জেল থেকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তিসহ সমস্ত রাজনৈতিক আন্দোলনে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অমর সৃষ্টি এই গানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি বলেন, এই গানটি শুনলে একটি অন্যরকম শক্তি পাওয়া যায়, যা অন্য কোন গানে অনুরূপভাবে পাওয়া যায়না। এই গানটি শুনলে আমাদের শরীরের রক্ত টগবগিয়ে উঠে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ভারতের ‘পিপ্পা’ চলচ্চিত্রে গানটির সুর বিকৃত করে অন্যভাবে তুলে ধরা  হয়, যা শুধু কবির প্রতি অসম্মানই নয়, বাংলার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও বাঙালি জাতির প্রতি অবজ্ঞা।


তিনি আরও বলেন, কবির গানে যে কোনো ব্যক্তির নতুন করে সুরারোপ কিংবা সুর পরিবর্তন বাঁশরী চরম ধৃষ্টতা বলে মনে করে। কবির সব সৃষ্টি বাঙালি জাতি তথা বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। এই কালজয়ী গানের বিকৃতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। ভারতের চলচ্চিত্রে এই গানের বিকৃত সুরকে আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।

ড. লীনা তাপসী খান বলেন, কাজী নজরুল ইসলামের এত সুন্দর একটি কালজয়ী গান, সেই গানটি শুধু গান ছিল না। একটি স্বাদেশিক একটি সত্ত্বা তৈরি করেছিল। এই গানটি একটি জাতীয় সম্পদ। এই গানটি নিয়ে এ আর রহমানের নাড়াচাড়া করা উচিত হয়নি। এ আর রহমান এই গানের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট না বুঝেই সুরারোপ করেছেন বলে জানান তিনি।  


সংগীতশিল্পী ফাতেমা-তুজ-জোহরা তার বক্তব্যে বলেন, ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানের ব্যাপারে কী চুক্তি হয়েছিল আমরা এখনও জানি না। আমরা এখনও ধোঁয়াশার মধ্যে আছি। এর চুক্তির নেপথ্যে যারা ছিল তাদের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে আইনগত পদক্ষেপের দিকে অগ্রসর হওয়া উচিত বলে জানান তিনি। তিনি উক্ত গানের সুর বিকৃতি বা পরিবর্তনের বিষয়ে বলেন, শুধু প্রতিবাদ করে কিছু হবে না, এটা আমাদের শক্ত হাতে প্রতিহত করতে হবে।


একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ড. মনোরঞ্জন ঘোষাল বলেন, বাঙালি হিসেবে যদি দু’জন বাংলা সাহিত্যিকের নাম উল্লেখ করতে হয়, তাহলে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের নাম বলতেই হবে। তিনি নজরুলের কালজয়ী গানের সুর বিকৃত করে ভারতের পিপ্পা চলচ্চিত্রে ব্যবহার ও প্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করেন। সবাই মিলে ভারতীয় হাই-কমিশনে স্মারকলিপি প্রদান করবেন বলে তিনি জানান।

প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নজরুলের “কারার ঐ লৌহকপাট” এই ঐতিহাসিক গানের সুর বিকৃতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং এ আর রহমানের মত শিল্পীর উচিত হয়নি এ গানের সুরে অযাচিত হস্তক্ষেপ দুঃখজনক। তিনি আরও বলেন, সবাই পিপ্পা সিনেমা থেকে কারার ঐ লৌহ কপাট গানটি প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছে, কিন্তু এটি হবে একটি ভুল। কারণ “কারার ঐ লৌহকপাট” এর মত ঐতিহাসিক গান এই সিনেমা থেকে বাদ দিলে তা এই নজরুল ও এই গানের অবমাননা হবে, তাই পিপ্পা সিনেমা থেকে এই গান বাদ নয়, বরং এই গান নজরুলের সুরে পুনরায় এই সিনেমায় সংযোজন করতে হবে।  

এতে সংগীতশিল্পী রুমী আজনবীসহ পরদেশী সিদ্দিক বক্তব্য প্রদান করেন এবং তারাও নজরুলের গানের সুর বিকৃতির বিরুদ্ধে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং পিপ্পা সিনেমা থেকে এ আর রহমানের গান প্রত্যাহারের জন্য আহ্বান জানান। আলোচনাসভাটি সঞ্চালনা করেন সংগীতশিল্পী নাদিয়া আরেফিন শাওন।