ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে “জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম উৎসব” অনুষ্ঠিত (The “National Poet Kazi Nazrul Islam Festival” was held at Rabindra Sarobar in Dhanmondi)

22 February 2025

ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে “জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম উৎসব” অনুষ্ঠিত (The “National Poet Kazi Nazrul Islam Festival” was held at Rabindra Sarobar in Dhanmondi)

ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ বাঁশরী – একটি নজরুল চর্চা কেন্দ্র’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় “জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম উৎসব” শীর্ষক একটি উন্মুক্ত উৎসব।


 দুপুর ২টায় রবীন্দ্র সরোবরের মঞ্চে মনোরম আবহে বাঁশরীর শিল্পী নাদিয়া আরেফিন শাওনের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয় এই উৎসবের সূচনা ঘটে। অতঃপর বাঁশরীর নিয়মিত শিল্পীগণ শিল্পী সুদাম কুমার বিশ্বাসের নেতৃত্বে বাঁশরীর উদ্বোধনী সংগীত “জয় হোক, জয় হোক” পরিবেশন করেন। এরপর টাঙ্গাইলের সারে গা মা শিল্পচর্চা নিকেতন দলীয় সংগীত, দলীয় কবিতা ও দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে। তাদের দলীয় পরিবেশনার পর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা “সংকল্প” এর বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি খিলখিল কাজী বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার, ক্রেস্ট তুলে দেন।


পরের পর্বে বাঁশরী আয়োজিত এ প্রতিযোগিতার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১ম স্থান অধিকারীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা শুরু হয়। এতে সংগীত শাখায় ১ম স্থান অধিকারী অরিত্র বসাক, মুগ্ধতা সাহা, অরণী সুজয়া নজরুল সংগীত গেয়ে শোনায় এবং কবিতা শাখায় ১ম স্থান অর্জনকারী মাহরিন সাফিয়া বিনতে ইকরাম, সরকার উৎস সাহিত্য ও হুমায়রা মেহজাবীন নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করে শোনায়। কাজী নজরুল ইসলাম রচিত গানের ছন্দে নৃত্য পরিবেশন করে সৈয়দা জাইমা ইসলাম ও বিনতিয়া বশির বর্ষা।


এরপর নির্ধারিত সূচী অনুযায়ী বাঁশরীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড ইঞ্জিনিয়ার খালেকুজ্জামান সভাপতির বক্তব্য প্রদান করেন। কবি নাতনী জনাব খিলখিল কাজী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন এবং বক্তব্য প্রদান করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যের পর পড়ন্ত বিকেলে আবারো শিল্পী সুদাম কুমার বিশ্বাসের নেতৃত্বে বাঁশরীর শিল্পীবৃন্দ দলীয় কণ্ঠে কারার ঐ লৌহ কপাট, দুর্গম গিরি কান্তার মরু, আজকে শাদী বাদশাজাদীর পরিবেশন করেন।


নজরুলের শ্যামলা বরণ বাংলা মায়ের গানে একক নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যশিল্পী লিউনা। শহিদ কবির পলাশ ও সালাহউদ্দিন আহমেদ একক কণ্ঠে নজরুল সংগীত পরিবেশন করেন।


প্রখ্যাত আবৃত্তিশিল্পী টিটো মুন্সী অনবদ্য কণ্ঠে আবৃত্তি করেন কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী কবিতা “বিদ্রোহী”। হঠাৎ বৃষ্টির কারণে অনুষ্ঠান বেশ কিছুক্ষণ অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়।


বৃষ্টি থামার পর এ উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত “বনের মেয়ে পাখী” পালানাটক মঞ্চায়ন করা হয় সর্বশেষ পরিবেশনা হিসেবে। কাজী নজরুল ইসলাম রচিত এ পালানাটকের নাট্যভাবনা ও পরিকল্পনা করেন ড. ইঞ্জিনিয়ার খালেকুজ্জামান এবং নির্দেশনা দেন সাজ্জাদ সাজু। নাটকটির প্রযোজনা করে বাঁশরী - একটি নজরুল চর্চা কেন্দ্র এবং বাঁশরী রেপার্টরির ব্যানারে পালানাটকটি পরিবেশিত হয়। 


গল্প অনুযায়ী নাটকটির শুরু রায়গড়ের পাহাড় ও জঙ্গলাকীর্ণ শ্বাপদসংকুল পথে, যেখানে রয়েছে বাঘের পদচারণা। সেই ভয়াল পথে পালকিবাহী বেহাড়া দল বাঘের আক্রমণের মুখে পড়ে। প্রাণভয়ে ভীত বেহারার দল পালকি ফেলে রেখে পলায়ন করে।


অন্যদিকে, পালকির ভেতরে নারী কণ্ঠের আর্তচিৎকার শুনে ছুটে আসে সাপুড়ে ভগুলাল। হিংস্র বাঘের সঙ্গে লড়াই করে সে উদ্ধার করে এক শিশুকন্যাকে। তবে শিশুটির মাকে বাঁচাতে পারে না ভগুলাল। সে উদ্ধারকৃত শিশুটিকে আগলে রেখে তাকে বড় করার দায়িত্ব নেয় এবং কন্যাশিশুটির নাম রাখে পাখী। ভগুলালের ঘরে বেড়ে ওঠা পাখী হয়ে গেলো বনের মেয়ে পাখী, যার নামে নাটকটির নামকরণ। সাপুড়ে ভগুলালের আদর-যত্নে-পিতৃস্নেহে বেড়ে ওঠে পাখী। সর্পদেবী মনসার কৃপায় পাখী লাভ করে যে কোনো ব্যাধি সারাবার অলৌকিক ক্ষমতা। একপর্যায়ে পাখীর সঙ্গে পরিচয় ঘটে সুজন নামের এক যুবকের, যার সাথে তার পরিচয় প্রণয়ে পরিণত হয়। গল্পের নানা ঘটনাপ্রবাহ ও মনসার বরে প্রাপ্ত ক্ষমতা পাখীকে তার অনিবার্য নিয়তির দিকে নিয়ে যায়, যেখানে সে ফিরে পায় তার হারানো পরিচয় ও পরিবার।


কাঙ্ক্ষিত দর্শক সমাগম এবং দর্শকদের সাড়া জাগানিয়া আনন্দ-উচ্ছ্বাসে এই নাটকের মঞ্চায়ন শেষের মধ্য দিয়ে অর্ধদিবসব্যাপী এ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

ভিডিওচিত্রে এক নজরে 'জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম উৎসব ২০২৫' এর কিছু মুহূর্ত দেখতে এখানে ক্লিক করুন: https://fb.watch/x_m6QCk8qc/